শনিবার, ৭ মে, ২০১৬

স্টেশনের গল্প

স্যার আর কতো ক্ষন অপেক্ষা করবেন?
-যতক্ষন না ট্রেন আসছে। আর তো কোন উপাই নেই আমার।
স্যার হয়ত ট্রেন আপনার জন্য না।
-তোমার কি মাথা ঠিক আছে? আমাকে ট্রেন নিয়ে হয়ত আমার মেয়েকে ফেরত দেবে।
স্যার আমার কোন পিছুটান নাই। আমি ট্রেনে গেলে আমার বাচ্চার কাছে যেতে পারব এ দিকে আপনিও আপনার মেয়েকে ফেরত পাবেন।
-তা কি করে হয়?
স্যার আপনি আসেন, আমি অপেক্ষা করি।
দূরে ট্রেনের হুইসেল শোনা যাছে। স্যার আপনি বাসায় যান।
শামিম দূরে টেন দেখতে পাচ্ছে। গাছের ঝরা পাতা স্টেশনে ঊড়তেছে। হালকা মিষ্টি বাতাস, এতো মায়া এই পৃথিবীতে ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়। আজ থেকে কয়েক বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করে সে, বছর ঘুরতেই ঘরে বাচ্চা আসার আমেজ চলে আসে। বাচ্চার জন্মের সময় স্ত্রী মারা যায়। অসুখের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাচ্চাটা বেশি দিন পৃথিবীর মুখ দেখতে পারেনি।
শামিম উঠে দাড়ালো। ট্রেন চলে এসেছে। হালকা বাতাস সঙ্গে মিষ্টি একটা গন্ধ। প্রকৃতির ও একটা আলাদা গন্ধ আছে আগে সে কোন দিন জানতে পারেনি।


দ্বিতীয় সত্তা

সকাল থেকেই আকাশে মেঘ। ভোরে বৃষ্টি হওয়ার পরও আকাশ পরিষ্কার হয়নি আর হওয়ার আভাস ও নেই। যে কোন সময় আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামতে পারে। মাঝে মাঝে ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা দিচ্ছে।
রাহিন অনেকক্ষন ধরে ডোর বেল চাপছে কিন্তু ভেতরের কোন সাড়া শব্দ নেই। বাড়ির ভিতরে কেউ আছে বলে মনেও হয়না। এদিকে আকাশ আরো খারাপ হয়েছে। শেষ আর একবার চেষ্টা করে দেখা যাক। রাহিন দরজায় জোরে জোরে নক করল। শেষ চেষ্টায় মনে হয় কাজ করেছে, ভেতর থেকে একটা খস-খসে গলা শোনা গেল।
-কে ভাই আপনি?
-স্যার আমার নাম রাহিন, আপনি আমাকে এই ছোট পরিচয়ে চিনবেন না, ভেতরে যদি একটু বসতে দেন তাহলে সময় নিয়ে কথা বলা যেত।
-আপনাকে না চিনে ভেতরে বসতে দেয়া কি ঠিক? তাছাড়া আপনার চেহারাটা কেমন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি।
-স্যার ভেতরে বসে সব বলছি।
রাহিনকে একটা ঘরে বসতে দিয়ে লোকটা অন্য ঘরে গেলো। অনেকক্ষন হলো গিয়েছে এখনও আসার নাম নেই। লোকটার বয়স আশির কাছা কাছি হবে, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। মনে হয় এই বাড়িতে একাই থাকেন।
প্রায় আধাঘন্টা পর লোকটা ঘরে ঢুকলেন। হাতে একটা লাঠি, বলতে গেলে প্রায় লাঠির উপর ভর করেই ঘরে ঢুকলেন।
-বলো বাবা তুমি কে?
রাহিন খেয়াল করল আপনি থেকে তুমিতে নেমেছে। তারমানে এখন মন মেজাজ ভালো।
-স্যার আমার নাম রাহিন। থাকি ইতালি। আমি ঢাকায় একটা মেসে থাকতাম। স্যর মনে পড়ে আমাকে?
-না ,এরকম আমার কেউ পরিচিত নেই।
-আচ্ছা , স্যার আপনার নীলার কথা মনে আছে? অসুখ হয়ে মারা গেলো! আর তার পরের বছর আমি মেডিকেল কলেজ ছেড়ে ইতালি গেলাম।
লোকটা মনে হয় এবার চিনতে পেরেছে, চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো, মুখটা হয়ে গেলো ফ্যাকাসে।
-এইটা সম্ভব না! তুমি চিশ্চয় মজা করছো?
না স্যার। আমি সত্যি আপনার সামনে। আপনার লেখা চরিত্র এখন আপনার সামনে।
-তুমি মিথ্যে বলছো।
-আমার কথা সত্যি মনে না হলে আপনি একবার বাহিরে গিয়ে দেখে আসেন। আপনার বাসার সামনে বাগানে।
লোকটা বাগানে গিয়ে অবাক হলেন, তার লেখা প্রতিটা চরিত্র বাগানে। ওইতো সুমন, ইমা, ত্রয়ি, এমনকি গ্রাম থেকে মোড়ল সামছুদ্দিন ও এসেছে
দূর থেকে রাহিন হাত নাড়াচ্ছে। লোকটা রাহিনের কাছে গেলো।
-স্যার এই যে আমার মেয়ে মিতু। কেমন হয়েছে? অনেক মিষ্টি তাই না? সেও কিন্তু আপনার লেখা চরিত্র।
-হ্যা অনেক মিষ্টি হয়েছে।
-স্যার আপনি মনে হয় অনেক চিন্তায় পড়ে গেছেন আমাদের দেখে। মনে বিশ্বাস অবিশ্বস এর খেলা চলছে। স্যার আমরা সত্যি বাস্তবে আছি। আর আপনার ছেলে মারা যাওয়ার পার আপনি একা হয়ে গেছেন তাই আমরা আপনার আশে পাশে এখন সব সময় থাকব। আপনি বুড়ো মানুষ কখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাছাড়া আমরা আপনার পার্শে থাকলে আপনার সময় খারাপ যাবেনা।
লোকটা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ঘরের দিক হাটা দিলেন। মাথা প্রচন্ড ব্যথা করছে।
লোকটার নাম মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লেখক। পরিবারে লোক জন বলতে একটা ছেলেই শুধু ছিলো। এমনি অনেক চুপ-চাপ থাকেন ছেলে মারা যাওয়ার পর আরো চুপ চাপ হয়ে যান। বাহিরে খুব একটা বের হন না, এর মাঝে আর নতুন কোন বই লেখেননি। মাঝে মাঝে বাগানে একা একা কথা বলতে,হাসতে দেখেছে অনেকেই। তবে ছেলে মারা যাওয়ার বছর খানিক পরে তিনিও মারা যান।

পার্থিব চরিত্র (ছোট গল্প )

অনিক হাসপাতালের বারান্দায় এমাথা থেকে ওমাথা পায়চারি করছে। কিছুতেই মনটা শান্ত করা যাচ্ছেনা। তার ছেলের ক্যন্সার। খুব অল্প বয়সে ছেলেটা শরীরে ক্যন্সার বাধায় বসে আছে। এ দিকে তার স্ত্রী গত দুদিন মুখে কিছু দেয়নি, ছেলের পাসে বসে সারা দিন কাঁদতেছে । একঘন্টা পর পর যত আত্মীয় –স্বজন দল বেধে দেখে যাচ্ছে।
আনিকের স্ত্রী বারান্দায় এসে অনিককে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল “আমি কিছু জানিনা তুমি আমার ছেলেকে সুস্থ করে নিয়ে আসো যে ভাবে পারো” আনিকের কানদিয়ে কোন শব্দ ঢুকছেনা আর মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছে। সে তার পুরো জীবনে কোন দিন বুঝতেও পারেনি, হঠাৎ গত মাসে সে বুঝতে পারল সে একজন লেখকের চরিত্র মাত্র। তার পুরো জগত একজন কলম দিয়ে লেখেছে। যেদিন বইটা লেখা শেষ হয়েছে সেদিন সে জানতে পেরেছে সে একটা উপন্যাসের প্রধান চরিত্র।
বেপারটা সে তার স্ত্রীকে বলেছে কিন্তু তার স্ত্রী কান দেয়নি, সব শুনে বলল ছেলের অসুস্থতার কারনে বেশি চিন্তা করে ফেলছো, মাথায় যত সব আজগুবি চিন্তা গুর পাক খাচ্ছে, এবার ঘুমায় পড়ো। অনিক চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো, কিন্তু চোখ বন্ধ করলে সে পুরো বইটা দেখতে পায়। সে এখন আছে ১২৩ নম্বর পৃষ্ঠার ৬ নম্বর লাইনে। তার ছেলের মারা যাবে ৩০৮ নম্বর পৃষ্ঠায়।
ডাক্তার যতোই চিকিৎসা করুক লেখক লেখে ফেলেছে বাচ্চাটা মারা যাবে এখন বাঁচার একটা রাস্তা লেখক যদি তার লেখা কিছুটা পরিবর্তন করেন তবেই। অনিক কিছুতেই বুঝতে পারছে না এই লেখকের দেখা পাওয়া যাবে কোথায়? আর কি ভাবে?
অনিক হাসপাতালের বারান্দায় চেয়ারে মাথা নিচু করে ভাবতেছে। লেখকের দেখা মিলবে কি ভাবে। আচ্ছা উপন্যাসটা লেখা হইছে কার ভিউ থেকে? চোখ বন্ধ করে পুরো বইটা দেখা শুরু করলো কিন্তু একি এক একটা অধ্যায় এক একজনের ভিউ থেকে। লেখক নিজেও গল্পে এসেছেন তবে খুব অল্প সময়ে। গল্পের শুরুতে আর গল্পের শেষে।
অনিক একটা সিগারেট ধরালো। নিকোটিন অনেক সময় চিন্তায় সাহায্য করে। কিন্তু এখন মাথায় কোন চিন্তা ভালো ভাবে কাজ করতেছে না। আচ্ছা সে যা ভাবতেছে সব ঠিকতো? নাকি সে ধীরে ধীরে পাগল হয়ে যাচ্ছে!! এমন হতে পারে সে বাস্তবেই আছে, লেখক, উপন্যাস, চরিত্র এসব তার কল্পনা কিন্তু সে চোখ বন্ধ করলে যে বইটা দেখে সেই বই এর লাইন আর তার জীবনের প্রতিটা কাজ হুবুহু মিলে যায় কি ভাবে?
এভাবে কিছু দিন কেটে গেলো। ছেলের অবস্থা যতো সময় যাচ্ছে ততো খারাপ হচ্ছে। ডাক্তারেরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। অনিক চোখ বন্ধ করলো বইয়ে যা লেখা আছে তেমনই হচ্ছে। অনিক বইয়ের সামনের দু পৃষ্ঠা পড়ে ফেলল। মানে ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে আগেই বুঝে গেছে। আচ্ছা বইয়ে যা লেখা আছে সে যদি সেইটা না করে তাহলে কেমন হবে? লেখক কি বুঝতে পারবেন তার গল্পে পরিবর্তন হয়েছে! এমনও হতে পারে বইয়ের বাহিরে এখন যদি কিছু করা হয়, ঠিক সেই মুহূর্তে হয়ত লেখক তার গল্পের সংশোধন করতেছেন। ছেলেকে বিদেশে নিয়ে গেলে কেমন হয়! বইয়ে কোথাও লেখা নেই সে তার ছেলেকে বিদেশে নিয়ে গেছে চিকিৎসার জন্য।
অনিক আর দেরি করেনি। খুব তাড়া তাড়ি বিদেশে নিয়ে গেছিলো ছেলেকে। এখন তার ছেলে প্রায় সুস্থ। অনিক এখনো চোখ বন্ধ করলে সেই বইটা দেখতে পায়। বইয়ের মাঝের কিছু পাতা খালি, কোন লেখা নেই। তবে কি লেখক তাকে সুযোগ দিয়েছে তার জীবনের কিছু সময় তার মতো করে সাজানোর! আবার এই সব চিন্তা উদ্ভটও হতে পারে, সে বাস্তবেই আছে...।

শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬

অদ্ভুত গন্ধ (ছোট গল্প )

অনেক দিন পর সুমন নামে এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা। পেশায় উনি সাংবাদিক। অনেক দিন পর দেখা হওয়ায় অনেক গল্প শুরু হয়ে গেলো। গল্পের তালে আমি ওনাকে বললাম গাজীপুরে এক ফকির বাবা আছে, অনেক ক্ষমতা ওনার।
বড়োভাই মুখে একচিলতে হাসি নিয়ে বলল শুনি ওনার কি ক্ষমতা আছে?
-আমাদের অফিসের এক লোকের অনেক টাকা বাড়ি থেকে চুরি যায়, পরে ঐ ফকির বাবার সাহায্যে টাকা পাওয়া যায়।
-তাই নাকি, ঠিক আছে ঐ ফকির বাবার ঠিকানা যোগাড় কর সামনে সপ্তাহে যাব।

সত্যি সত্যি আমরা পরের সপ্তাহে বের হলাম সেই ফকির বাবার সন্ধানে। এর মধ্যেই আমি ঠিকানা নিয়ে রাখছি। আমরা যেখানে যাচ্ছি সেটা গাজীপুর বললে ভূল হবে। আমার ধারনা ছিলনা গাজীপুরে এমন গ্রাম দেখতে পাবো। গ্রাম পার হয়ে সামনে একটা ঘন জঙ্গল বন। বাড়ি কই!!!! দূরে একটা কুড়ে ঘর দেখা যাচ্ছে। আমি সুমন ভাইকে বললাম ঐটা মনে হয় ফকির বাবার বাড়ি।
বাড়ির সামনে খাদেম টাইপ এক লোক দাড়ায় আছে। আমাদের দেখে লোকটা দুটো চেয়ার আনে দিলো।
-বাবা এখন ধ্যনে আছেন, আধা ঘন্টা পর আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
সুমন ভাই আমার কানে ফিস ফিস করে বলল আমাদের দেখে শালা ধ্যনে বসছে, কতো বড়ো ভন্ড, আমাদের ইচ্ছে করে অপেক্ষা করাচ্ছে।
অবশেষে আমাদের আপেক্ষা শেষ হলো। খাদেম এসে বললো বাবা আপনাদের তলব করেছেন।
ঘরের ভেতরে ঢুকে আমি অবাক হয়ে গেলাম। ঘরের ভেতরে অন্ধকার। খুব হালকা আলো। আর পুরো ঘরে হালকা একটা মিষ্টি গন্ধ। ঠিক কিসের গন্ধ আমি বুঝতে পারতেছি না। ফকির বাবার রোগাটে চেহারে, খালি গায়ে বসে আছে। গলায় লাল রঙ এর একটা গামছা। আর ঘরে মাঘ মাসের ঠান্ডা অথচ বাহিরে রোদ আর গরম।
আমি কিছু বললাম না, সব সুমন ভাই বলল। ফকির বাবার খুব কাছে গিয়ে বলল বাবা আমার স্ত্রীর বাচ্ছা হয় না,গত তিন বছর অনেক ঔষধ,অনেক ডাক্তার দেখাইছি কোন কাজ হয় না।
আমি অনেক কষ্টে হাসি চেপে আছি কারন সুমন ভাই এখনো বিয়ে করেনি বাচ্ছা হওয়া দূরের কথা। বাবা কিছুক্ষান চুপ থেকে বলল তোর স্ত্রী কি তোর থেকে হালকা খাটো?
-হ্যা বাবা
-গায়ের রঙ উজ্জল ফর্সা?
-হ্যা বাবা।
ফকির বাবা একটা গাছের শিকড়ের মতো কি যেন সুমন ভাইয়ের হাতে দিলো। আর বলল প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কামড় করে খেতে।
আমি মোটামুটি নিশ্চিত হলাম এই শালা ভন্ড। হটাৎ সুমন ভাই বলল আপনার ঘরে এই গন্ধটা কিসের।
ফকির বাবার মুখ দেখে মনে হলো উনি এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলেন, প্রশ্ন শুনে খুশি হলেন।
-এই গন্ধ আমার কেরামতি, আপনারা চাইলে আপনাদের পছন্দের গন্ধ এই ঘরে ছড়ায় দিতে পারি।
-আমি বললাম লেবুর গন্ধ ছড়ান।
সাথে সাথে পুরো ঘর লেবুর গন্ধ ছড়ে গেলো। সুমন ভাই এবার একটু নড়ে চড়ে বসলেন।
-আচ্ছে এমন কোন গন্ধ কি আছে যা আপনি আনতে পারেন না।
-হু, খুব ছোট বেলায় জঙ্গলের মধ্যে জঙ্গলি একটা ফুলের গন্ধ অনেক ভালো লাগে তবে সেই ফুল গাছ আর কোন দিন দেখি নাই আর সেই গন্ধও আর আনতে পারি না।
কথা শেষ হওয়ার আগে পুরো ঘরে অদ্ভুত এক গন্ধ ছড়ায় গেলো। সুমন ভাই উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল ফকির বাবা গন্ধটা চিনতে পারছেন? গন্ধটা আপনার জন্য উপহার রইলো।
এবার আমিই বোকা হয়ে গেলাম।
বাহির হয়ে সুমন ভাইকে বললাম ভাই কিছুই তো বুঝলাম না। সুমন ভাই হাসতে হাসতে বলল আমার জায়গায় তুই যদি ফকির বাবারে মিথ্যা বলতি তাহলে ধরা পড়তি। কারন বাবার হয়ত যাদু ক্ষমতা নেই কিন্তু উনি চিন্তাধারা পড়তে পারেন। আমার কল্পনা শক্তি এতোটা বাস্তবিক করতে হয়েছে যে উনি আমার চিন্তাধারা পড়ে বিশ্বাস করেছে আমার স্ত্রী আছে।
-আর গন্ধের ব্যপারটা? আপনি কি ভাবে শেষে গন্ধটা ছড়ালেন?
-থাকনা কিছু গল্প রহস্য সব যদি জানে ফেলিস তাহলে রহস্যের মজা পাবিনা তো।

আমি ও বোতল ভূত

সময় যে খুব একটা ভালো যাচ্ছে তা না। সব কিছু এলো মেলো ভাবে যাচ্ছে, যে কোন সময় মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে পারে। একটা ঘটনা বললে সব কিছু পরিস্কার হবে। এক দিন সন্ধায় ইলেকট্রিসিটি নেই গরমে জানালার পাশে বসে আছি, হটাৎ খাটের নিচে কে যেন খুক খুক কাশি দিলো। এমনিতেই আমি ভিতু মানুষ । চিৎকার দিতে গিয়েও দিলাম না, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম।
-কে খাটের নিচে?
-বাবা আমি জীবনানন্দ দাশ।
-মানে? কোন জীবনানন্দ দাশ? সামনের বাড়ির জীবন বাবু নাকি? আপনি আমার খাটের নিচে কি করেন?
-বাবা আমি জীবন বাবু না, আমি কবি জীবনানন্দ দাশ। খাটের নিচে এতো সিগারেটের শেষ অংশ পড়ে, গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। কাল থেকে পরিস্কার করবে, আমার থাকতে কষ্ট হয়।
কথা শেষ হওয়ার আগেই ইলেকট্রিসিটি চলে আসলো। আমি খাটের নিচে উকি দিলাম, মানুষ থাকার কোন চিহ্ন খুজে পেলাম না।
পেটে গন্ডগোল তাই মাথাটাও মনে হয় ভূল কাজ করা শুরু করেছে, আগের আমলের লোকেরা বলতো পেটে আম্বল হলে মাথা কাজ করেনা । আমি আর ঝিম মারে বসে না থেকে প্রাইভেট পড়াতে বের হলাম।
আমার ছাত্র ক্লাস থ্রি তে পড়ে। তাকে পড়াতে যে পরিমার শক্তি খরচ হয় সেই পরিমান শক্তি দিয়ে ভর দুপুরে চার ঘন্টা ফুটবল খেলা যাবে।
আজ বেচারা চুপ চাপ পড়তেছে। অন্য দিনের চেয়ে তাড়া তাড়ি পড়া শেষ করল। আমি একটু অবাক হলাম।
-মন খারাপ? মা বকছে?
-না স্যার। আপনাকে একটা কথা বলব যদি আপনি আব্বু আম্মুকে না বলেন।
-হুম বলো
পেন্সিল বক্স থেকে একটা হোমিওপ্যথি ঔষধ এর একটা ছোট বোতল বের করল। ভিতরে ধোয়াটে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।
-তুমি কি হুমায়ুন আহমেদের “বোতল ভূত ” বইটা পড়েছ?
-জী স্যার।
আমি মনে মনে যা ভাবছিলাম তাই। বাচ্ছা ছেলে, নিজের জন্য নিজেই ভূত তৈরী করেছে, ভেতরের ধোয়া নিশ্চয় মশা তাড়ানো কয়েলের ।
-তোমার এই বোতলে ভূত নেই, সব মনের কল্পনা।
-না স্যার সত্যি ভূত আছে। আমি কথাও বলেছি।
-ও, তাই নাকি ঠিক আছে প্রমান দাও। জানালা দিয়ে বোতল টা তুমি রাস্তায় ছুড়ে মারো, যদি সকালে দেখো ওই বোতল পেন্সিল বক্স এ তাহলে বুঝব সত্যি ভূত আছে ওই বোতলে।
আমি কিছু বোঝার আগেই আমার ছাত্র বোতলটা জানালা দিয়ে বাহিরে ছুড়ে মারলো।

মেসে ফিরতে আমার রাত এগারোটা বাজে গেলো। আবার সেই ইলেকট্রিসিটি নেই। তার উপর ভ্যপসা গরম। ঘরে ঢুকে জানালাটা খুলতেই আবার সেই খুক খুক কাশি। সন্ধার মতো আর ভয় পেলাম না।
-আপনি এখনো আছেন?
-বাবা কই আর যাবো। আমি তো এখানেই থাকি গত দশ বছর।
-কি বলেন!! এখানে এতো দিন, আগে তো আপনাকে দেখিনি।
-বাবা প্রয়জন পড়েনি তাই। বাবা খুদা লেগেছে তোমার বিস্কিট গুলো দাও একটু খাই।
-আমার ঘরে বিস্কিট আছে আপনি কি ভাবে জানেন?
-তোমার সবকিছুই জানি। তোমার একটা জিনিস আছে আমার কাছে নাও।
আমি হাত বাড়ালাম তখুনি ইলেকট্রিসিটি চলে আসলো। আমি বোকার মতো হাত বাড়ায় বসে আছি। নিজেকে অনেক গাধা মনে হচ্ছে। হটাৎ বিছানায় তাকায় দেখি আমার ছাত্রের সেই ভূত বোতল।
সেদিন রাতে আর ভালো ঘুম হলোনা ছাড় ছাড়া স্বপ্ন দেখে রাত পার হয়ে গেলো। বিকেলে বোতলটা পকেটে নিয়ে প্রাইভেট পড়াতে গেলাম। প্রতিদিন সন্ধার পরেই পড়াই আজ একটু আগেই গেলাম।
আমাকে দেখে ছাত্র এবং ছাত্রের মা দুজনেই চিৎকার করে উঠলো। স্যার আপনি গত দুদিন পড়াইতে আসেননি কেনো? আপনাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। কোন এক বুড়া ফোন ধরে বলে জীবনানন্দ বলছি। আপনার নাম বললে বলে রং নম্বর।
-স্যর আপনার ফোন কই?
আমি ফোন খোজার আশায় পকেটে হাত দিলাম। পকেটে ফোন নেই আছে শুধু একটা বোতল।