শনিবার, ৭ মে, ২০১৬

দ্বিতীয় সত্তা

সকাল থেকেই আকাশে মেঘ। ভোরে বৃষ্টি হওয়ার পরও আকাশ পরিষ্কার হয়নি আর হওয়ার আভাস ও নেই। যে কোন সময় আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামতে পারে। মাঝে মাঝে ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা দিচ্ছে।
রাহিন অনেকক্ষন ধরে ডোর বেল চাপছে কিন্তু ভেতরের কোন সাড়া শব্দ নেই। বাড়ির ভিতরে কেউ আছে বলে মনেও হয়না। এদিকে আকাশ আরো খারাপ হয়েছে। শেষ আর একবার চেষ্টা করে দেখা যাক। রাহিন দরজায় জোরে জোরে নক করল। শেষ চেষ্টায় মনে হয় কাজ করেছে, ভেতর থেকে একটা খস-খসে গলা শোনা গেল।
-কে ভাই আপনি?
-স্যার আমার নাম রাহিন, আপনি আমাকে এই ছোট পরিচয়ে চিনবেন না, ভেতরে যদি একটু বসতে দেন তাহলে সময় নিয়ে কথা বলা যেত।
-আপনাকে না চিনে ভেতরে বসতে দেয়া কি ঠিক? তাছাড়া আপনার চেহারাটা কেমন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি।
-স্যার ভেতরে বসে সব বলছি।
রাহিনকে একটা ঘরে বসতে দিয়ে লোকটা অন্য ঘরে গেলো। অনেকক্ষন হলো গিয়েছে এখনও আসার নাম নেই। লোকটার বয়স আশির কাছা কাছি হবে, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। মনে হয় এই বাড়িতে একাই থাকেন।
প্রায় আধাঘন্টা পর লোকটা ঘরে ঢুকলেন। হাতে একটা লাঠি, বলতে গেলে প্রায় লাঠির উপর ভর করেই ঘরে ঢুকলেন।
-বলো বাবা তুমি কে?
রাহিন খেয়াল করল আপনি থেকে তুমিতে নেমেছে। তারমানে এখন মন মেজাজ ভালো।
-স্যার আমার নাম রাহিন। থাকি ইতালি। আমি ঢাকায় একটা মেসে থাকতাম। স্যর মনে পড়ে আমাকে?
-না ,এরকম আমার কেউ পরিচিত নেই।
-আচ্ছা , স্যার আপনার নীলার কথা মনে আছে? অসুখ হয়ে মারা গেলো! আর তার পরের বছর আমি মেডিকেল কলেজ ছেড়ে ইতালি গেলাম।
লোকটা মনে হয় এবার চিনতে পেরেছে, চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো, মুখটা হয়ে গেলো ফ্যাকাসে।
-এইটা সম্ভব না! তুমি চিশ্চয় মজা করছো?
না স্যার। আমি সত্যি আপনার সামনে। আপনার লেখা চরিত্র এখন আপনার সামনে।
-তুমি মিথ্যে বলছো।
-আমার কথা সত্যি মনে না হলে আপনি একবার বাহিরে গিয়ে দেখে আসেন। আপনার বাসার সামনে বাগানে।
লোকটা বাগানে গিয়ে অবাক হলেন, তার লেখা প্রতিটা চরিত্র বাগানে। ওইতো সুমন, ইমা, ত্রয়ি, এমনকি গ্রাম থেকে মোড়ল সামছুদ্দিন ও এসেছে
দূর থেকে রাহিন হাত নাড়াচ্ছে। লোকটা রাহিনের কাছে গেলো।
-স্যার এই যে আমার মেয়ে মিতু। কেমন হয়েছে? অনেক মিষ্টি তাই না? সেও কিন্তু আপনার লেখা চরিত্র।
-হ্যা অনেক মিষ্টি হয়েছে।
-স্যার আপনি মনে হয় অনেক চিন্তায় পড়ে গেছেন আমাদের দেখে। মনে বিশ্বাস অবিশ্বস এর খেলা চলছে। স্যার আমরা সত্যি বাস্তবে আছি। আর আপনার ছেলে মারা যাওয়ার পার আপনি একা হয়ে গেছেন তাই আমরা আপনার আশে পাশে এখন সব সময় থাকব। আপনি বুড়ো মানুষ কখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাছাড়া আমরা আপনার পার্শে থাকলে আপনার সময় খারাপ যাবেনা।
লোকটা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ঘরের দিক হাটা দিলেন। মাথা প্রচন্ড ব্যথা করছে।
লোকটার নাম মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লেখক। পরিবারে লোক জন বলতে একটা ছেলেই শুধু ছিলো। এমনি অনেক চুপ-চাপ থাকেন ছেলে মারা যাওয়ার পর আরো চুপ চাপ হয়ে যান। বাহিরে খুব একটা বের হন না, এর মাঝে আর নতুন কোন বই লেখেননি। মাঝে মাঝে বাগানে একা একা কথা বলতে,হাসতে দেখেছে অনেকেই। তবে ছেলে মারা যাওয়ার বছর খানিক পরে তিনিও মারা যান।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন